রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়। রাগ নিয়ন্ত্রণের কিছু সফল কৌশল।

রাগ নিয়ন্ত্রণের কিছু সফল কৌশল।

দৃষ্টিভঙ্গি বদলান

প্রথমেই সিদ্ধান্তে আসুন আপনি আর রাগবেন না।
দৃষ্টিভঙ্গিগত এই পরিবর্তন আপনার রাগমুক্তির প্রথম পদক্ষেপ।

একবার নবিজি (সঃ) এর কাছে পরামর্শ চাইল আরবের এক বেদুইন। নবিজি (সঃ) তাকে একটি পরামর্শ দিলেন, সবসময় রাগকে দমন করতে হবে।

বেদুইন খুশি মনে ফিরে গেল তার গোত্রে, কিন্তু গিয়ে দেখল গ্রামে এক বিরাট হাঈামা বেধে গেছে।

তার গোত্রের ছেলে পাশের গোত্রের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ডাকাতি করেছে। প্রতিশোধ হিসেবে তারাও গ্রামের কয়েক বাড়িতে ডাকাতি করেছে। এতেই দুই গোত্রে লেগেছে বিরাট ঝগড়া। অবস্থা এমন যে উভয় পক্ষই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। সবকিছু শুনে ঐ বেদুইন ও রেগে যুদ্ধের জন্য তৈরি হতে গেল।

এমন সময় হটাৎ তার মনে পড়ল নবিজী (সঃ) এর কথা। নিজের ভুল বুঝতে পেরে সাথে সাথে সে তওবা করল।

অস্ত্র রেখে প্রতিপক্ষ গোত্রপতির কাছে গেল। বিনয়ের সাথে প্রস্তাব করল, ছোট ব্যাপারটি নিয়ে হানাহানি না করে বরং নিজেই তাদের ক্ষতিপূরন দিয়ে দেবে।

বেদুইন এর কাছ থেকে এমন নরম সুরে কথা শুনে প্রতিপক্ষ গোত্রপতির মনও নরম হলো। ক্ষতিপূরনের টাকা তো নিলো না। উল্টো নিজের গোত্রের সবাইকে শান্ত করল।

বেদুইনের রাগকে নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্তই বড় আকারের হানাহানি ও রক্তপাত থেকে বাচিয়ে দিল উভয়পক্ষকেই।

আসলে রাগ কখোনও ফলপ্রসূ সমাধান দেয় না। বরং সমস্যাকে আরো জটিল করে তোলে।

হযরত আলী (র)- এর একটি উক্তি
রাগের মুখে এক মুহুর্তের সংযম, অনুতপ্ত হওয়ার হাজার মূহুর্ত থেকে আপনাকে বাচাবে।

তাই নিজের সাথে ওয়াদা করুন আপনি সকল পরিস্থিতিতেই রাগমুক্ত থাকবেন।

এই সিদ্ধান্তকে ভেতর থেকে জোরালো করতে অটোসাজেশন দিন।
রেগে গেলাম তো হেরে গেলাম।
রাগের কারন খুঁজে বের করুন। কেন আপনি রেগে যান।

এটা কি আপনার কাছে পরিষ্কার। এখন যদি কোন কারনে কারও সাথে রাগারাগি করেন তাহলে ভেবে দেখবেন কেন আপনি নিজেকে প্রশান্ত রাখতে পারেন নি।

মনোবিজ্ঞানীরা রাগকে বলেন সেকেন্ডারি ইমোশন বা দ্বিতীয় স্তরের আবেগ।

একটি আইসবার্গ বা হিমবাহের তলকে যেমন দেখা যায় না। তেমনি রাগের কারক আবেগগুলোই যখন মনকে আচ্ছন্ন করে। মানুষটি তখন ফেটে পড়েন রাগ বা ক্ষোভে।

একটু সময় দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করুন। ঠিক কী কারনে আপনি রাগছেন।

বোঝার পর ঠিক করে নিন দৃষ্টিভঙ্গি, রেগে যাওয়ার বিকল্প সমাধান

১) কেউ খারাপ ব্যবহার বা অপমান করলে।

রাগ করলে পরিস্থিতি আরো খারাপ বৈ ভালো হবে না। তার চেয়ে আপনি মাথা ঠান্ডা রাখলে সম্ভাবনা আছে যে, অপরপক্ষ ভুল বুঝবে এবং অনুশোচনা করবে।
• অপমানকে মনে করবেন জাল মুদ্রা। জাল মুদ্রা যেমন আমরা কেউ গ্রহন করি না। অপমানকেও গায়ে মাখার কোন প্রয়োজন নেই।

২) প্রতারিত হলে।

• রেগে না গিয়ে ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহন করুন। এবং ভবিষ্যতের জন্য সাবধান হয়ে যান।

৩) অন্যায় অবিচার করলে।

• মনে রাখুন একা প্রতিবাদ করা অর্থহীন। সবলের অন্যায় এর মুখে দূর্বল এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।
• অন্যায়ের প্রতিকার করার মতো শক্তি সঙ্ঘবদ্ধতা অর্জন করা পযন্ত অপেক্ষা করুন।

৪) স্বীকৃতি না পেলে।

• স্বীকৃতির প্রত্যাসা না করে কাজ করে যান। কাজই তার প্রতিদান দেবে।

৫) বিদ্রুপ করলে।

• রেগে গিয়ে আপনি কী তার উদ্দেশ্যকেই সার্থক করছেন না?
• নিজের নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে তুলে দিয়ে কেন হাসির পাত্র হবেন।
• উল্টো আপনি হাসুন সে ভড়কে যাবে।

৬) মানসিক চাপ থাকলে।

• রেগে গেলে চাপ বাড়বে বৈ কমবে না। তাতে কাজের মান আরো খারাপ হবে, সময় লাগবে বেশি। বরং এই চাপকে সুযোগ হিসেবে, নিজের দক্ষতাকে বাড়িয়ে নেওয়া, আরো যোগ্য হওয়ার জন্য।

৭) কর্তৃত্ব হারানোর ভয় থাকলে।

• কর্তৃত্ব ধরে রাখার আসল কৌশল হলো মাথা ঠান্ডা রাখা।
• পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারা।

৮) প্রত্যাখ্যাত হলে।

• প্রস্তাব দেওয়ার অধিকার যেমন আপনার আছে। তেমনি প্রস্তাব প্রত্যাখানের অধিকার ও অপরজনের আছে।
• এটা আপনাকে স্বীকার করতে হবে।

৯) যুক্তিসঙ্গত কথা বুঝতে না চাইলে।

• উত্তেজিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবুন।
• যে ভাষায় বললে অপরপক্ষ বুঝবে তাকে সে ভাষায়ই বোঝান।
• প্রয়োজনে সময় নিন।
• নিজেকে সময় দিন।
• রাগ এলে দাড়ানো থাকলে বসে পড়ুন।
• বসে থাকলে শুয়ে পড়ুন।

মনের উত্তেজনা প্রশমনে কার্যকর একটি টেকনিক নবিজী (সঃ) এর শিক্ষা

রাগজনিত উত্তেজনার প্রথম ধাক্কাটা যদি সামাল দিতে পারেন, তাহলেই আপনি পরবর্তী মুহুর্তগুলোকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।

বলা হয় দেহে রাগের জৈব রসায়ন সম্পন্ন হতে সময় লাগে মাত্র ২০ সেকেন্ড।

কাজেই এই সময়টা চুপ করে হোক ঘটনাস্থল থেকে চলে গিয়ে হোক কিংবা উল্টো গুনে হোক।
যেকোনভাবে মোনযোগটা একটু সরিয়ে রাখুন। অত্যন্ত মুহুত্বের বিস্ফোরণ রক্ষা করতে পারবেন।

দম গননা করুন

রাগ প্রশমনে দম গননা একটি চমৎকার একটি পদ্ধতি। আপনি টের পাচ্ছেন যে রাগ আসছে। চিৎকার চেচামেচি প্রত্যুত্তর দেয়ার আগে লম্বা করে দম নিন যতটা ধীরে সম্ভব।

দম ছাড়তে ছাড়তে ভাবুন রাগ ক্রোধ ক্ষোভ বাতাসের সাথে সাথে শরীরের ভেতর থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে।

এভাবে ১০ বা ২০ পজন্ত গননা করুন। হটাৎ রাগ ক্ষোভ অনুভব করলে। এই প্রক্রিয়ায় আপনি দ্রুত প্রশান্ত হতে পারবেন।

নিয়মিত নামাজ পড়ুন। মেডিটেশন করুন, রাগের সবচেয়ে কার্যকরী প্রতিরোধক মেডিটেশন।

নামাজ মেডিটেশন এর থেকে বেশি কার্যকরী। নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর আদেশ পালন করা হয় তার সাথে সাথে শরীরের কার্যকরি ব্যায়াম, মেডিটেশন সব একসাথে হয়ে যায়।

বৈজ্ঞানিক পরিক্ষায় দেখা গেছে, ব্রেনে সেরেটনিনের মাত্রা কমে গেলে আমরা রেগে যাই।
মেডিটেশনকালে সেরেটনিনের উৎপাদন বেড়ে যায়। এ-সময় ব্রেনে তৈরি হয় আলফা ওয়েভ।

যা ব্রেনের চিন্তা ও বিচার বিশ্লেষণের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে আত্নপর্যালোচনা যেমন সম্ভব হয়। তেমনি ক্ষমা করাও হয়ে যায় সহজ।

আরও পড়ুন 

রেগে গেলে মানুষ কেন হেরে যায় জেনে নিন। রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।

[ ] মন থেকে ক্ষোভগুলো ঝেড়ে ফেলুন।

ক্ষোভ হলো অবদমিত বা অপ্রকাশিত রাগ। আমাদের রেগে যাওয়ার একটা বড় কারন ক্ষোভ। ধরুন অতীতে কারো দুর্ব্যবহারে এর কারনে মনে রাগ হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবিক কারনে তখন সেটা প্রকাশ করতে পারেন নি, চেপে গিয়েছিলেন।

আপনি হয়তো সচেতন মনে সেটা ভুলে গেছেন। কিন্তু অবচেতন মন থেকে সেটা নিজে নিজে মুছে যায় না। যে কারনে অনেক সময়ই দেখবেন, অতীতে যে আপনার সাথে দূর্ব্যবহার করেছিল, তার সাথে আপনি অল্পতেই রেগে যান।

এজন্য যা করতে পারেন।

• সাদা কাগজে আপনার রাগ বা ক্ষোভের বিষয়গুলোকে লিখুন। যা যা মনে আসে।
• রাগের মাথায় যা বলতে চেয়েও বলতে পারেন নি।
• বা যে গালাগাল দিতে পারেন নি লিখুন তার সবই।
• এরপর কাগজগুলোকে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে, টিনের কৌটা বা অন্য কোনো পাত্রে আগুনে জ্বালিয়ে শেষ করে দিন।
• অথবা পানিতে ভাসিয়ে দিন।
• অতীতে যার আচরনে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তাকে মুখোমুখি বসান। যে বিক্ষুব্ধ উওরগুলো তখন দিতে চেয়েও দিতে পারেন নি। সেগুলো দিন।
• প্রয়োজনে লাঠি নিয়ে তার কাল্পনিক অবয়ের উপর ইচ্ছামত আঘাত করুন।

এভাবে কিছুদিন অনুশীলন করলে দেখবেন আপনার মন ক্ষোভের জঞ্জাল থেকে সাফ হচ্ছে।

Tw3press

My name is Masudur Chowdhury I'm an Management and Engineering Consultant with more than 7 years of experience.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *