ব্লকচেইন কী | প্রযুক্তি জগতের বিস্ময়কর আবিষ্কার | Blockchain এর ব্যবহার।

ব্লকচেইন কী

  • ইন্টারনেট জগতের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার ব্লকচেইন। Bitcoin এর মতো অসংখ্য ক্রিপ্টোকারেন্সির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে এই ব্লকচেইন প্রযুক্তি।
  • অনেকেই বলেন ইন্টারনেট আবিষ্কারের পর সবচেয়ে যুগান্তকারী উদ্ভাবন হলো ব্লকচেইন। প্রযুক্তি আমাদের ভবিষ্যৎ কে নতুন করে নির্মাণ করতে যাচ্ছে।
  • ব্লকচেইন প্রযুক্তি ইন্টারনেট ব্যবস্থায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। একই সাথে ইন্টারনেট পরিষেবা গুলোকে বিকেন্দ্রীকরণ করছে।

ব্লকচেইন অত্যন্ত শক্তিশালী একটি Concept।

  • এই ধারণার মূল কথা হল কাউকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করা যাবে না।
  • অথচ বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই আমাদের সভ্যতা গড়ে উঠেছে।
  • কেউ আমাদেরকে টাকা দিলে আমরা বিশ্বাস করি এটি জাল টাকা নয়।
  • বাজার থেকে খাবার কেনার সময় মনে মনে বিশ্বাস রাখি খাবারটি ভেজাল নয়।

কিন্তু বাস্তবে সবকিছু এত সহজে বিশ্বাসযোগ্য নয়

  • বাজারে অসংখ্য জালনোট আছে। সেই সাথে ভেজাল খাবারের বাজার সয়লাব।
  • একইরকমভাবে বিশ্বের অসংখ্য দুর্নীতিতে ভরা ব্যাংক আছে, যারা মোটে ও বিশ্বস্ত নয়।
  • ব্যাংকগুলো গ্রাহকের বিশ্বাস ভঙ্গ করে গ্রাহকের টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারে।
  • তেমনি ঘটনা ঘটেছিল 2007 সালের অর্থনৈতিক মন্দায়।
  • সেই মন্দার পর সাতোশি নাকামোতো নামের এক কাল্পনিক চরিত্র পৃথিবীর বহু পুরনো অন্ধবিশ্বাস প্রথা বাতিল করে।
  • নতুন এক ব্যবস্থার জন্ম দেয়, একে বলা হয় ব্লকচেইন।

Blockchain যেভাবে কাজ করে:

how to work blockchain

ব্লকচেইন ব্যবস্থায় কোন একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বাস করে, তাদের কাছে আপনার তাকাবার তথ্য গচ্ছিত রাখতে হবে না। একজন দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তা আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য পরিবর্তন করে টাকা গায়েব করতে পারলেও। ব্লকচেইন এ এটা সম্ভব নয়, কারণ:

  • এখানে সব কিছুই ঘটে প্রকাশ্যে, বিশাল কোন তথ্য ব্যবস্থা সবাই মিলে ছোট ছোট অংশের নিয়ন্ত্রণ করাই হল ব্লকচেইন।
  • ব্লকচেইন এ যে বিষয়টি সবচেয়ে ভালো তা হলো কোনো ঘটনা ঘটার সাথে সাথে তথ্যের আদান-প্রদান সফলভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়।
  • ব্লকচেইন ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংকের মতো অসংখ্য মধ্যস্বত্বভোগীদের কে এড়িয়ে চলা সম্ভব।
  • এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতি গুটিকতক কোম্পানির দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারবে।
  • ধারণা করা হচ্ছে 2025 সালের মধ্যে বিশ্বের 10 শতাংশ জিডিপি, ব্লকচেইন এর অধীনে চলে আসবে,

ব্লকচেইন হল তথ্য সংরক্ষণ সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি

একটি ব্লক হলো কোনো একটি বিষয়ের সামান্য কিছু তথ্য। একাধিক ব্লক একটির সাথে আরেকটি জোড়া লেগে তৈরি হয় ব্লকচেইন।

  • মনে করুন আপনার কাছে চারটি কয়েন আছে, সেখান থেকে আপনি একটি কয়েন খরচ করলেন তাহলে একটি নতুন ব্লগ তৈরী হবে।
  • এবং নতুন ব্লক টি প্রথম ব্লকের সাথে সংযুক্ত থাকবে। তখন প্রথম ব্লকটি লক হয়ে যাবে।
  • এভাবে আপনি নতুন ইনকাম করলে বা ব্যয় করলে নতুন Block তৈরি হবে।
  • আর আগের ব্লকটি লক হয়ে যাবে তার মানে আগের তথ্য পরিবর্তন করা যাবে না।
  • কারণ এসব ব্লক খোলা যায় না এবং লিংকগুলো ভাঙা যায় না।
  • ভীষণ শক্তিশালি কঠিন কোড দিয়ে এই লিংকগুলো তৈরি করা হয়েছে।
  • সে কারণেই ব্লকচেইন এ থাকা তথ্যগুলোর নিরাপদ এবং বিশ্বাসযোগ্য।
ব্লকচেইন এর টাকার হিসেব কে বলা হয় লেজার, ব্লকচেইন লেজার। ব্যাংকের মতো কোনো একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে না। ব্লকচেইন লেজারের কপি থাকে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিগত কম্পিউটারে হুবহু সংরক্ষিত থাকে।
  • ব্লকচেইন এ থাকা সকল কম্পিউটার এর সংযোগ কে বলা হয় ডিসেন্ত্রালাইজড নেটওয়ার্ক।
  • এই নেটওয়ার্কের সংরক্ষিত টাকার হিসেব কে বলা হয় ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার।
  • প্রতিটি নতুন Block যুক্ত হবার সাথে সাথে Network এ থাকা সবগুলো computer এর তথ্য আপডেট হয়ে যায়।
  • শুধু তাই নয় এই নেটওয়ার্কে থাকা সবগুলো লেজারের কপি একটি আরেকটির সাথে সংযুক্ত।
  • কেউ যদি ব্লক চিনে থাকা তথ্য পরিবর্তন করতে চায় তাহলে তাকে নেটওয়ার্কে থাকা সকল কম্পিউটারের তথ্য গুলো অনবরত পরিবর্তন করতে হবে।
  • কারণ প্রতি মুহূর্তেই নতুন নতুন Block তৈরি হইতেছে।
  • শক্তিশালি কঠিন কোড গুলো ভেঙে তথ্য পরিবর্তন করা সুধু কঠিনই নয়, অসম্ভবের কাছাকাছি।
  • ব্লকচেইন থাকা তথ্য একইসাথে সুরক্ষিত এবং স্বচ্ছল কারণ পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে যে কেউ এই হিসেব দেখতে পারে এবং কোন কিছু গড়বড় দেখলে যে কেউ তার প্রতিবাদ করতে পারবে।

Blockchain Technology শুধু আর্থিক লেনদেনের সাথে সম্পর্কিত নয়, এছাড়াও রয়েছে…

  • মেডিকেল রেকর্ড
  • বিশ্ব বাণিজ্য
  • পরিবহন সেক্টর
  • খাদ্যনিরাপত্তা
  • নবায়নযোগ্য শক্তি

সহ বহু খাতে Blockchain সফল ভাবে ব্যবহার করা যাবে। Facebook ,Google এর মত বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে আমরা আমাদের মূল্যবান তথ্য গচ্ছিত রাখি। সেই সাথে বিশ্বাস করি তারা আমাদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করবে। কিন্তু বাস্তবে অনেক সময় এসব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। আমাদের একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য তারা বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে বিক্রি করে দেয়।

  • সেজন্য Blockchain ভিত্তিক বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং চ্যাটিং অ্যাপস গড়ে উঠেছে। যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করা সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে। Blockchain এ থাকা তথ্য যেহেতু পরিবর্তন করা যায় না।
  • তাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করে নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব। যাতে নির্বাচনের ফলাফলে কারচুপি করতে না পারে।

নতুন এই প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিতরা বলছে Blockchain এর মাধ্যেমে,

  • আমাদের অর্থ হবে আরো সুরক্ষিত।
  • প্রশাসনিক ব্যবস্থা হবে দুর্নীতিমুক্ত।
  • এবং আমাদের online platform হবে secured এবং তৃতীয় পক্ষের নজরদারি মুক্ত।
  • তবে সকল জায়গায় Blockchain এর ব্যবহার শুনিশ্চিত করতে হলে
  • যে Software দিয়ে ব্লকচেইন লেখা হবে সেটি হতে হবে নির্ভুল, and coading হতে হবে নির্ভুল।
  • কিন্তু বাস্তবতা হলো শতভাগ নির্ভুল software তৈরি করা কখনও সম্ভব হয়নি।
  • সামান্য একটি programing coad এর ভুলের কারণে বিপুল পরিমাণ ক্ষয় ক্ষতি হতে পারে, একে বলা হয় castle-hughes প্রবলেম।

কোন দুর্গের দেয়াল যতই উঁচু হোক না কেন তার দরজা যদি দুর্বল হয় তাহলে প্রকৃত সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়না। ব্লকচেইন নিয়ে অনেকে আশা-নিরাশার দোলাচলে থাকলেও। প্রযুক্তি দানব প্রতিষ্ঠানগুলোর একচ্ছত্র আধিপত্য থেকে বাঁচতে হলে ব্লকচেইন প্রযুক্তি বিকল্প নেই।

Tw3press

My name is Masudur Chowdhury I'm an Management and Engineering Consultant with more than 7 years of experience.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *