সাদা চিনি কেন ক্ষতিকর জেনে নিন | চিনির আসক্তি দূর করার উপায়।

সাদা চিনি কেন ক্ষতিকর জেনে নিন।

চিনি আমাদের অনেকেরই পছন্দের খাবার, নিজেরা তো খাচ্ছি, অম্লানবদনে তুলে দিচ্ছি বাড়ির ছোট শিশুদের মুখে। কিন্তু চিনি খেয়ে কী সর্বনাস ঘটাচ্ছেন আপনি, আপনি যদি জানতেন তাহলে খাবার না বিষ বলে ছুড়ে ফেলে দিতেন, এই সাদা চিনিকে।

বুড়িয়ে যাওয়া।

চিনি খেলে আপনার ত্বকে ভাজ পড়ে, এবং চেহারা বুড়িয়ে যায়।

নেদারল্যান্ড এর Leiden University

নেদারল্যান্ড এর Leiden University এর একদল গবেষক ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষের ব্লাড সুগার মাপার পর এদের ছবি দেখতে দেন ৬০ জন সেচ্ছাসেবীকে।

সেচ্ছাসেবীরা এমন প্রতিটি মানুষকে বেশি বুড়োটে দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করে। যাদের রক্তে চিনি বেশি পেয়েছিলেন বিজ্ঞানিরা।

বলা হয় রক্তে প্রতি এক মিলি লিটার বেশি চিনি থাকা মানে আপনি আপনার বয়সের চেয়ে পাঁচ মাস বেশি বুড়ো হয়েছেন।

মুখের ব্রনের সাথে চিনির খুবি ভালো সম্পর্ক। চিনিযুক্ত খাবার যত খাবেন। তত চেহারা ও শরীরে ব্রনের সমস্যা দেখা দিবে। বিশ্বাস না হলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

ক্যান্সার।

চিনি জাতীয় খাবার নিয়মিত খেলে ক্যান্সার হবার ঝুকি বাড়ে। বিশেষ করে ব্রেস্ট ও কোলন ক্যান্সার। এটা এজন্যে হয়, চিনি শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন বাড়ায়।

চিনি শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন বাড়ায়।

এদিকে কোষ বিভাজনের গুরুক্তপূন্য অনুঘটক হলো ইনসুলিন।

আর আমরা জানি কোষ বিভাজনের একটি অস্বাভাবিক সহজাতই হলো ক্যান্সার।

ডায়বেটিস।

চিনির ক্ষতি হিসেবে সম্ভবত এ রোগ টি সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ৯০১,২৪৯ জন মহিলার উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে। যে মহিলারা প্রতিদিন এক গ্লাস করে মিষ্টি জাতীয় পানি খান, তাদের ডায়বেটিস এর ঝুকি। আর যারা মাসে একবার খান তাদের চেয়ে ৮৩ ভাগ বেশি।

চিনি, লিভার

লিভার এর কাজ হলো চিনিকে ফ্যাট এর পরিনত করে শরীরে জমিয়ে রাখা। বেশি চিনি খাওয়া মানে শরীরে বেশি ফ্যাট বা চর্বি জমানো। এ অবস্থাকেই বলে ফ্যাটি লিভার।
তো বুঝতেই পারছেন, তখন লিভার আপনার শরীরের যে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে, সেগুলো ব্যাহত হয়।

দাতের ক্ষয়।

চিনি খেলে দাত নষ্ট হয়। American journal of clinical nutrition এর গবেষণায় দেখা যায়
চিনি খেলে দাত নষ্ট হয়। American journal of clinical nutrition এর গবেষণায় দেখা যায়, বেশি চিনি খেলে মুখের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো মরে যায়। ফলে দাতের ক্ষয় হয়। কমে যায় দাঁতের উজ্জ্বলতা।

নেই কোন পুষ্টিগুন।

চিনি এমন একটি খাবার যার কোন পুষ্টিগুন নেই। না মিনারেল, প্রোটিন, ফাইবার কিছুই নেই চিনিতে। ফলে চিনি জাতীয় খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে দেখবেন। আপনার ক্ষুদা লাগছে। yale University এ নিয়ে গবেষণা করেছিল। তারা দেখেছে চিনি জাতীয় খাবার যারা বেশি খায়। তাদের ক্ষুদা বেশি এবং খাবার খাওয়ার পরিমান ও বেশি।

কমে কর্মোদ্যম।

চিনি শরীরের ল্যাপটিন নামের হরমোন কে বাধা সৃষ্টি করে। ল্যাপটিন হচ্ছে সেই হোরমোন, যা খাওয়ার সময় আমাদের জানান দেয় পেট ভরে গেছে আর খাওয়ার দরকার নেই।
সেই সাথে বলে যে এবার এই শক্তিকে খরচ কর। কাজে নেমে পড়।

কিন্তু বেশি বেশি চিনি খেলে এই হরমোন টি কমে যায়। যার ফলে আপনার কর্মোদ্যম কমে। শরীরে জমে চর্বি।

পেটের চর্বি।

পেটের চর্বি বাড়ে চিনিতে। আর ডাক্তারের মতে এই চর্বি হলো সবচেয়ে ক্ষতিকর চর্বি। কারন এ থেকেই বিশ্বের এক নম্বর ঘাতব ব্যাধি হৃদরোগ থেকে শুরু করে বড় বড় রোগ হয়।
শুধু কী শরীরেই শেষ।

 অবসাদ বিষন্নতা।

আপনার মনের উপর ও কিন্তু চিনির প্রভাব কম নয়। রক্তের কোষে ব্লাড সুগার জমতে থাকলে ব্রেনে ডোপামিন ও ওপিএম এর মাত্রা কমে যায়। ফলে অবসাদ ও বিষন্নতা এসে ভুগে।

চিনি আসক্তি।

কিন্তু এতো কিছু জানার পরও চিনি খাওয়া কমাতে পারেন না কেন জানেন।

কারন চিনি আসক্তি সৃষ্টি করে এবং তা মাদকের মতই। বিজ্ঞানিরা চিনির ফলে একই ধরনের ডোপামিন নিঃসরণ হতে দেখেছেন ব্রেনে। যা ঘটে কোকেন গ্রহনের সময়।

নিউরোপ্লাস্টিসিটি গবেষণার এটা সাম্প্রতিক আবিষ্কার। যে মাদকাসক্তদের আচরনের সাথে, চিনি আসক্তদের অনেক মিল।

আপনি দেখবেন যারা বেশি চিনি খায়, সময় যাওয়ার সাথে সাথেই তাদের খাওয়ার পরিমান ও বাড়তে থাকে।

আরও পড়ুন >>

MRI Scan: এম আর আই কীভাবে করা হয়। মানুষের শরীরের রোগ নির্নয়।

পুশ আপ করার উপকারিতা, Benefit of push up

প্রতিকার | তাহলে চিনির আসক্তি থেকে মুক্তি পাব কীভাবে।

প্রথমেই ভেবে দেখুন আপনি Raw sugar বা কাচা চিনি কতটুকু খান। কখন খান। কোন কোন খাবারের সাথে খান।

প্রথমেই ভেবে দেখুন আপনি Raw sugar বা কাচা চিনি কতটুকু খান। কখন খান। কোন কোন খাবারের সাথে খান।   সেটা কী চায়ে। যদি চা হয়, তাহলে ঠিক করুন, এখন থেকে চায়ে কোন চিনি খাবেন না।
সেটা কী চায়ে। যদি চা হয়.

  • তাহলে ঠিক করুন, এখন থেকে চায়ে কোন চিনি খাবেন না।
  • দেশের বাজারে যে চিনি পাওয়া যায় তাতে ক্ষতিকর মাত্রায় আমদানি নিষিদ্ধ সোডিয়াম সাক্লামেট বা ঘনচিনির অস্তিত্ব পেয়েছেন গবেষকরা।
  • এজন্য গ্রীন টি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। চায়ের মধ্যে সবচেয়ে উপকারী চা হওয়া ছাড়াও গ্রীন টি খাওয়া যায় চিনি ছাড়াই।
  • এরপর দেখুন বাইরে গেলে আপনি কী কী খাবার খান। যাতে চিনি থাকে।

রেস্তোরাঁ বা ফাস্টফুড সপে আমরা অনেকে কফি বা আইসক্রিম খেতে যাই।

  • আপনি কী জানেন এক কাপ ফ্লেভারড কফির ড্রিংকে আট চামুচ পজন্ত চিনি থাকতে পারে। বা নিরীহ দেখতে আইসটি থাকতে পারে ৫ চামুচ চিনি।
  • আবার লো ফ্যাট বা সুগার ফ্রি নামের বাজারে যে তথাকথিত যে স্বাস্থ্যকর খাবার পাওয়া যায়। তা আসলেই কতোটা স্বাস্থ্যকর তা বুঝে নিতে হবে আপনাকে।
  • আপনি কী জানেন লো ফ্যাট নামে বাজারে যে দই পাওয়া যায় তা ২৫০ মিলি লিটার এর কাপে থাকতে পারে ১০ চামুচ চিনি। অতএব বর্জন করুন এসব খাবার।

তাজা ফল খেতে পারেন।

তাজা ফল চিনির থেকে ভাল
ফলে যে চিনি থাকে তা দেহের জন্য ক্ষতিকর তো নয়। বরং তা উপকারী। তবে ফলের নামে বতলজাত ফ্রুট জুস খেতে জাবেন না। ওটা সাদা চিনির মতোই ক্ষতিকর।

মিষ্টি রসগোল্লা পুরোপুরি বর্জন করুন।

  • বিয়ে উৎসব ও অন্যান্য উপলক্ষে মিষ্টির পরিবর্তে খেজুর খাওয়ার প্রচলন করুন।
  • চিনি বর্জনের এই উদ্যেগ প্রথম আপনি নিজে নিন। কাচা চিনি থেকে শুরু করে। চিনি মেশানো সবরকম খাবার পানীয় থেকে ধীরে ধীরে সরে আসুন।
  • এরপর পর্যায়ক্রমে বলুন পরিজন পরিচিত বন্ধুদের।
  • দেখবেন একসময় সমাজের বেশিরভাগ মানুষ চিনি খাওয়ার চেয়ে না খাওয়াতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

বর্জন করছে সবাই, অতি ক্ষতিকর এই সাদা চিনি।

Tw3press

My name is Masudur Chowdhury I'm an Management and Engineering Consultant with more than 7 years of experience.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *