মৃত্যুর পর আমাদের দেহের সাথে কি ঘটে জানলে আত্বা কেপে উঠবে। Human body fact। আলোর পথ

মৃত্যু জীবনের এক ভয়ানক অভিজ্ঞতার নাম। প্রতিটি জীবকে এই ভয়ানক বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। কোন প্রাণী এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে চায় না। কিন্তু কেউ পছন্দ করুক আর নাই করুক চিরন্তন সত্য হলো যে প্রত্যেক প্রাণীকেই এই অভিজ্ঞতার স্বাদ গ্রহণ করতে হয়।

বিশ্বে প্রতি মিনিটে প্রায় 100 মানুষ মারা যায়। কিন্তু মৃত্যুর পর মানুষের শরীরে কি ঘটে তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। বিজ্ঞানের ব্যাখ্যায় যা উঠে এসেছে তা মোটেও মানব সম্প্রদায়ের জন্য সুখকর কোন সংবাদ নয়।

মেডিকেল সাইন্স থেকে সম্প্রতি একটি এনিমেশন ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। যাতে দেখানো হয়েছে মৃত্যুর পর মুহূর্ত থেকে শরীরের পচন ধরা পর্যন্ত কি কি ঘটে।

 

তাই চলুন আজকে জেনে নেয়া যাক বিজ্ঞানের ভিত্তিতে মৃত্যুর পর আসলে আমাদের দেহের সাথে কি ঘটেঃ

স্বাগতম আপনাকে আজকের নতুন এপিসোডে,

প্রথম কয়েক ঘণ্টা

  • মৃত্যুর পর প্রাথমিকভাবে সেকেন্ডের মধ্যে অক্সিজেন দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যায়। এবং মস্তিষ্কের কার্যকলাপ কমতে থাকে। তারপর নিউরন এবং মস্তিষ্কের হরমোন যা শরীরের বিভিন্ন কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে তার কার্যক্ষমতা স্তিমিত হয়ে যায়। যদিও কিছু হরমোন মৃত্যুর কয়েক মিনিট পরেও কাজ করতে পারে।
  • এই কয়েক মিনিটের মধ্যে অবশিষ্ট সঞ্চিত-এ টি পি যা মানুষের শরীরে শক্তি প্রদান করে। তা ব্যবহৃত হয়ে যায় এবং পেশী গুলো আস্তে আস্তে শিথিল হয়ে যায়। এর ফলে একটি শক্তিশালী সম্ভাবনা আছে যে মৃত ব্যক্তি এই সময়টাতে নিজে থেকেই পায়খানা প্রস্রাব করতে পারে। মৃতদেহগুলো সেই সময়ে ফ্যাকাশে হয়ে যায় বিশেষ করে হালকা চামড়া যুক্ত মানুষের দ্বিপদ। রক্তপ্রবাহের ঘাটতির কারণে এটা ঘটে।
  • এবং মৃত্যুর 15 থেকে 20 মিনিট পর এটা দেখা যায়। এরপর হৃৎকম্পন এবং রক্তের স্বাভাবিক চলাচল ও থেমে যায়। তাই তখন মধ্যাকর্ষণ শরীরকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে যায় যার ফলে শরীরের সব রক্ত সর্বনিম্ন এক বিন্দুতে এসে জমা হয়।

মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা পরে

  • জমাটবাধা রক্তের কারণে শরীরে লাল এবং রক্তবর্ণ ধারণকরে বিবর্ণ হয়ে যায়। মৃত্যুর 12 ঘন্টা পরে শরীর সম্পূর্ণ বিবরণ হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াটি লিভর মর্টিস নামে পরিচিত। এই লিভর মর্টিস ফরেনসিক তদন্তকারীদের মৃত্যুর আনুমানিক সময় নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
  • মৃত্যুর পর তিন থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে আরেকটি লক্ষণ শরীরে দেখা যায়। তা আরষ্টতা নামে পরিচিত, যার ফলে শক্তির অভাবে সেলুলার অংগগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এবং পেশী কোষ দিয়ে ক্যালসিয়াম বের হয়ে যায়। যা প্রোটিন কে ধরে রাখতো এবং পেশির সংকোচন ঘটাতো।
  • পরবর্তী 24 থেকে 48 ঘণ্টার মধ্যে পেশিগুলো শক্ত হয়ে শরীর পুরোপুরি স্থগিত হয়ে যায়।

 মৃত্যুর একদিন পরঃ

  • এরই মধ্যে একদিন পর ধীরে ধীরে শরীরে পচন ধরতে শুরু করে। শরীরের কোষের মধ্যে সঠিক রক্তপ্রবাহ না হওয়ার কারণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এবং PH টিশুর বৃদ্ধি ঘটে। তারপর ব্যাকটেরিয়া গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল নালীর মাধ্যমে পেটের মধ্যে ঢুকে পেটের অঙ্গগুলো খেতে শুরু করে। একটি দুর্গন্ধযুক্ত প্রক্রিয়াজাতকরণ হিসেবে পরিচিত। এবং নোংরা অ্যামিনো এসিড তখন অতিক্ষুদ্র পরজীবী কীটবিশেষ মৃতজীব বিটল সহ ও পোকামাকড় কে আকর্ষণ করে।
  • তারপর পরজীবী গুলো তার পোঁচা টিশুতে ডিম পাড়তে শুরু করে। যা একদিনের মধ্যেই নতুন কীট জন্মগ্রহন করে। শুখকীট পোকাগুলো তখন শরীর হাড্ডিসার হওয়া পর্যন্ত টিস্যু খেতে থাকে।

প্রথম কয়েক সপ্তাহ

  • পোকাগুলো মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শরীরের টিস্যুর 60% গ্রাস করতে পারে। এবং তার ফলে শরীর পোচা, তরল এবং গ্যাস মুক্ত হয়।
  • মৃত্যু 20 থেকে 50 দিনের মধ্যে জৈবিক গাজন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। এবং পোকা, শুখকীট, প্রোটোজোয়া এবং ছত্ত্রাক আকর্ষিত হয়। এই প্রক্রিয়াটি শুষ্ক ক্ষয় হিসেবে পরিচিত। এবং এটি সম্পন্ন হতে এক বছরও লাগতে পারে।

মৃত্যুর এক বছর পর বা তারপরে

শুষ্ক ক্ষয় প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে। শরীরের যে অংশে অবশিষ্ট থাকুক না কেন। পরবর্তী বছরগুলোতে উদ্ভিদ ও প্রাণী তা খেয়ে ফেলে। শরীরের সকল উপাদান যদি সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত রাখা হয় তাহলে শরীরের প্রতিটি অংশই একসময় ভেঙে যাবে। তারপর অণুগুলো প্রকৃতিতে পুনর্ব্যবহৃত হবে।

 

Leave a Reply