দ্রুত ওজন কমাতে সকালে যা করবেন — ডা. তাসনিম জারা

আপনার ওজন কমানোর চেষ্টায় দ্রুত সাফল্য আনবে এমন আটটি সকালের অভ্যাস আজকে আলোচনা করবো.। ওজন কমানোর সাথে সাথে এই অভ্যাসগুলো আপনার শরীর সুস্থ রাখতেও সাহায্য করবে। শুরু করছি

1.  আধা লিটার পানি খাওয়া

সকালে নাস্তা খাওয়ার আগে আধা লিটার পানি খেয়ে নিতে পারেন. সেটাতে একটু পেট ভরা লাগবে। তখন কম নাস্তা খেলেও মনে হবে পেট ভরে গেছে। আর পানিতে কোনো ক্যালোরি নেইG ওজন বাড়ায় না। তাই নাস্তা খাওয়ার আগে কোন দুশ্চিন্তা ছাড়া আপনি আধা লিটার পানি খেয়ে নিতে পারবেন। দিনের অন্যান্য বেলাতেও এই  trick কাজে লাগাতে পারেন।

খাওয়ার আগে আধা লিটার পানি খেয়ে তারপর খাওয়া শুরু করবেন. ফলে আপনি স্বাভাবিকভাবে যতটুকু খেতেন, তার চেয়ে হয়তো কম পরিমাণে খেলেও পেট ভোরে যাবে, এবং সেটা ওজন কমাতে সাহায্য করবে। অনেকের একটা ধারণা আছে যে খাওয়ার আগে পানি খেতে নেই। খেলেও সেটা কমপক্ষে আধাঘন্টা আগে না হলে হজমে সমস্যা হবে। এই পরামর্শে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমান নেই, সুযোগ থাকলে খাওয়ার আগে নিশ্চিন্তে পানি খেয়ে নিতে পারেন।

2.দিনের নাস্তা ঠিক করে ফেলা

আমাদের যখন ক্ষুধা লাগে অনেক সময় আমরা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ফেলি। এই একটু সিঙ্গারা, পুরি, জিলাপি বা কোক খেয়ে নিলাম। এগুলো যে খুব স্বাস্থ্যকর খাবার না, সেটা প্রায় সবাই জানি। তাও লোভ সামলানো কঠিন হয়ে পরে। এটা ঠেকানোর একটা উপায় হতে পারে। সকালেই যদি আপনি আপনার দিনের নাস্তা গুলোর কথা চিন্তা করে রাখেন।

ক্ষুধা লাগলে কি খাবেন

এটা যদি আগে থেকেই ঠিক করে রাখেন। হয়তো একটা বক্সে ফল কেটে সাথে নিয়ে গেলেন, বা এক প্যাকেট বাদাম সাথে রাখলেন। ঘরে তৈরি কোন স্বাস্থ্যকর খাবারও হতে পারে। সকালে পরিকল্পনা করে রাখলে বা সাথে খাওয়ার মতো কিছু থাকলে হয়তো এই অস্বাস্থ্যকর খাবার প্রতি আকর্ষণ ঠেকানো একটু সহজ হবে।

Related Content⇒

খুশি থাকার সহজ উপায় – 7 Tips to be Happy in Life

সম্মান অর্জন করার ৬ টি উপায়। যে কেউ আপনাকে সম্মান করবে।

3. সকালে হেঁটে হেঁটে কাজে বা স্কুলে যাওয়া।

সকালে যখন কাজে যাচ্ছেন বা বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আসছেন দেখেন হেঁটে যাওয়া যায় কিনা। বেশি দূর হলে অল্প অল্প করে শুরু করেন। রিক্সায় গেলে একটু আগে নেমে, শেষ দশ মিনিট হেঁটে গেলেন। বাসে গেলে এক 20 minute আগে নেমে বাকিটুকু হেঁটে গেলেন। গারি দশ মিনিট আগে কোথাও পার্ক করলেন। আস্তে আস্তে হাঁটার পরিমাণটা বাড়াবেন। আর হাঁটার সময় দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করবেন। এই যে এভাবে প্রতিদিনের কাজের মধ্যে যাতায়াতের মধ্যে যদি অল্প করে ব্যায়াম ঢোকাতে পারেন। তাহলে নিয়মিত এই চর্চাটা থাকবে। শুধু ওজন কমানোর জন্যই না।

ওজন কমার পরে সেই ওজন ধরে রাখার জন্য এবং শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা অপরিহার্য

4. চিনি ছাড়া চা কফি খাওয়া।

সকালে যদি চা কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে। তাহলে সেগুলো চিনি ছাড়া খাওয়ার অভ্যাস করে। চিনি থেকে খুব সহজেই বাড়তি ক্যালোরি আসে, ওজন বেড়ে যায়। সুস্থ থাকার জন্য আলাদা করে চিনি খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। সেখান থেকে কোন বিশেষ পুষ্টি ও শরীর পায় না। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে চিনি যতটুকু এড়িয়ে চলা সম্ভব ততই ভালো।

চা কফিতে চিনি খাওয়া কমিয়ে দিলে বা চিনি খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিলে তা ওজন কমাতে অনেক সহায়ক হবে। প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগবে। কিন্তু আস্তে আস্তে দেখবেন চিনি ছাড়াই ভালো লাগছে।

আবার চায়ের সাথে অনেকে বিস্কিট খান।

বিস্কিট খেতে মিষ্টি না হলেও সাধারণত ভালো পরিমাণ চিনি দেওয়া থাকে। অধিকাংশ বিস্কিটেই অনেক পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। এই যে এই দুইটা বিস্কুটে আছে দুইশো ক্যালোরি। যা তিনটা সিদ্ধ ডিমের সমান। তাই যখন ওজন কমাতে চেষ্টা করছেন তখন চায়ের সাথে বিস্কিট এড়িয়ে চলাই ভালো।

5.সকালে ওজন মাপা।

গবেষণায় দেখা গেছে, যে যারা নিয়মিত ওজন মাপে তারা ওজন কমাতে বেশি সফল হয়। তাই সকালে উঠেই আপনি আপনার ওজন মেপে ফেলতে পারেন। ওজন মাপার নিয়ম হচ্ছে সকালে বাথরুম সেরে খালি পেটে মাপা। চেষ্টা করবেন প্রতিদিন একই কাপড় বা একই ধরনের কাপড় পড়ে ওজন মাপার। ওজনটা তারপর একটা খাতায় বা ক্যালেন্ডারে টুকে রাখতে পারেন।

ফোনে অনেক অ্যাপ আছে।

যেখানে ওজন গ্রাফ আকারে দেখায়। সেগুলোতে তুলে রাখতে পারেন। তাহলে সহজেই আপনি খেয়াল রাখতে পারবেন। ওজন বাড়ছে না কমছে। যদি দেখেন চেষ্টার পরে ওজন কমছে না। তাহলে কারণটা খুঁজে বের করে সেই অনুযায়ী পরিবর্তন আনতে পারবেন। ওজন মাপলে তো আর ওজন কমে না কিন্তু দিনের শুরুতে ওজন মাপার ফলে আপনার মাথায়, যে চিন্তাগুলো আসবে হয়তো আপনি একটু বেশি হাঁটার সিদ্ধান্ত নিবেন, বা আজকে পাসপোর্ট খাবেন না বলে ঠিক করলে, এগুলো ওজন কমাতে সহায়তা করে।

প্রতিদিন ওজন মাপলে কারো কারো একটু উদ্বেগের সৃষ্টি হতে পারে। আপনার ক্ষেত্রে যদি এমন হয় তাহলে প্রতিদিন না মেপে কয়েকদিন পর পর বা সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিনে মাপতে পারেন।

6. সকাল ব্যায়াম করা।

ওজন কমাতে হলে যে ব্যায়াম করতে হবে এটা আপনারা সবাই জানেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় দিনের ব্যস্ততায় সেটা পেছাতে পেছাতে আর করা হয়ে ওঠে না। তাই সকাল সকাল আপনি ব্যায়ামটা সেরে ফেলতে পারেন। সেটা যেকোনো ধরনের ব্যায়াম হতে পারে। দরিলা, জুতো হাঁটা, দৌড়, উটপশ, ভার উত্তোলন ইত্যাদি। যেটা সুবিধা হয় এবং আপনার ভালো লাগে এমন ব্যায়াম বেছে নিয়ে সকাল সকাল ব্যায়াম করে ফেললেন।

দিনের শুরুটা তখন খুব সুন্দর হবে। তারপর বিকেলে সময় পেলে আবার করতে পারবেন। সেটা বোনাস হয়ে গেল।

7.পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো।

সুস্থ থাকতে আমাদের যেমন প্রতিদিন খাদ্য দরকার, পানি দরকার, তেমনি ঘুমও দরকার। আর ঘুম যে কেবল বিশ্রামের জন্য তা না। আমরা যখন ঘুমাই আমাদের ব্রেন সচল থাকে এবং অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।

তবে আপনার মনে হতে পারে ওজন কমানোর সাথে ঘুমের কি সম্পর্ক?

সম্পর্ক আছে, অনেকগুলো গবেষণায় দেখা গেছে যে কম ঘুমের সাথে অতিরিক্ত ওজনের একটা সম্পর্ক আছে। সেটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।

  • কম ঘুম হলে ক্ষুধা বেশি লাগতে পারে।
  • পরিমাণে বেশি খাওয়া হতে পারে।
  • অনেক বেশি ফ্যাট বা কার্বো হাইব্রেড যুক্ত খাবারের প্রতি ঝোঁক আসতে পারে।
  • রাত জেগে থাকলে তখন আবার একটা কিছু খেতে ইচ্ছা করতে পারে।
  • ঘুম কম হলে দিনে ক্লান্ত লাগতে পারে।

দেখা গেল সেজন্য ব্যায়াম করা হচ্ছে না। বা সময় নিয়ে ভালো খাবার খাওয়ার এনার্জি নাই। চটপট ফাস্ট ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে ইচ্ছে করছে। আবার দিনের পর দিন যদি ঘুম কম হয় তাহলে মানসিক চাপ দেখা দিতে পারে। যেটা আরো অনেক ভাবে ওজন বাড়াতে পারে।

তাই ওজন কমানোর সময়েও পর্যাপ্ত পরিমাণে ভালো ঘুম দরকার। সাধারণত প্রাপ্ত বয়স্কদের সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। সকালে উঠে একটু হিসাব করে দেখেন কতক্ষন ঘুমালেন। যদি দেখেন ঘুম কম হচ্ছে। তাহলে ঘুমের রুটিনের পরিবর্তন আনতে হবে।

8. দিনের জন্য একটা অ্যাকশন পয়েন্ট ঠিক করা।

এখন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা গবেষণার কথা বলি। কঠিন কিছু না, শুনলেই বুঝবেন। অতিরিক্ত ওজনের একশো জন মানুষকে নিয়ে এই গবেষণাটা করা হয়। এই একশো জনকে দুই দলে ভাগ করা হয়েছিল। এক দলকে বলা হয়েছিল প্রতিদিন সকালে ওজন মাপতে। আরেক দলকেও সকালে ওজন মাপতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সাথে তাদেরকে বলা হয় ওজন মাপার পরে সেই দিনের জন্য একটা অ্যাকশন পয়েন্ট বা একটা কাজ ঠিক করতে। যেটা ওজন কমাতে সাহায্য করবে, যেমন সেটা হতে পারে যে আজকে আমি টেবিলে বসা ছাড়া কোনো খাবার খাবো না। আজকে বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা না দিয়ে একসাথে হাঁটতে যাব। রাত আটটার পরে আজকে কিছু খাবো না্ আজকে দশ হাজার কদম হাঁটবো। এরকম যেকোনো একটা জিনিস তারা সেই দিনের জন্য ঠিক করবেন।

Frequently Asked Question:

ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমাতে দুই চা চামুচ চিয়া সিড সকালে এবং রাতে এক গ্লাস পানির মধ্যে 30 মিনিট ভিজিয়ে রেখে, লেবুর রস মিসিয়ে খেলে ভাল ফল পাওয়া জাবে।

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর কমেন্ট এ লিখুন:

ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম ?

ওজন কমাতে ব্যায়াম ?

ওজন কমাতে ওটস খাওয়ার নিয়ম ?

ওজন কমাতে তোকমা খাওয়ার নিয়ম ?

ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ?

ওজন কমাতে তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম ?

ওজন কমাতে হাঁটার নিয়ম ?

ওজন কমাতে লেবুর উপকারিতা ?

ওজন কমাতে টক দই এর উপকারিতা ?

ওজন কমাতে শীতকালীন শাক সবজির উপকারিতা ?

ওজন কমাতে দারুচিনির উপকারিতা ?

ওজন কমাতে খাবার ?

ওজন কমাতে রাতের খাবার ?

ওজন কমাতে সাহায্য করবে যে ৫টি ভিডিও গেমস ?

ওজন কমাতে স্কিপিং ?

ওজন কমাতে দুপুরের খাবার ?

ওজন কমাতে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ?

ওজন কমাতে চান শুরু করবেন কিভাবে ?

ওজন কমাতে জিরা পানির উপকারিতা ?

ওজন কমাতে খেজুরের উপকারিতা ?

ওজন কমাতে সকালের নাস্তা ?

 

 

Tw3press

My name is Masudur Chowdhury I'm an Management and Engineering Consultant with more than 7 years of experience.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *