জেনে নিন বিক্রয় করার কৌশল – দাম না কমিয়ে কিভাবে বেশি সেলস করবেন | সেলস কৌশল | Sales Formula

জেনে নিন কৌশল – দাম না কমিয়ে কিভাবে বেশি সেলস করবেন।

কমিউনিকেশন সুন্দর করে করলাম, প্রডাক্ট নলেজ দিলাম, কাস্টমারকে ফিচারগুলো বললাম। কিন্তু তারপরেও প্রোডাক্টের দাম বেশি বলে কাস্টমার প্রোডাক্টটি নিচ্ছে না।

এইসব কমিউনিকেশন এবং প্রডাক্ট ফিচার বলে কি হবে, দাম না কমাইলে বিক্রি বাড়ানো যাবে না। কেন যে কোম্পানি বুঝে না। কেন যে বস বুঝতে চায় না। ডিসকাউন্ট না দিলে বিক্রি হয় না। কি কথাগুলো খুবই পরিচিত মনে হচ্ছে তাই না। খুবই কমন লাগছে আপনার কাছে।

আপনারা যারা সেলস প্রফেশনে আছেন।

ক্যারিয়ারে বহুবার এই ভাবে চিন্তা করেছেন, মনে হয়েছে প্রাইসের কারণেই প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারলেন না। আসল ব্যাপারটা হচ্ছে আপনার এই চিন্তাটা মোটেও সঠিক নয়। ডিসকাউন্ট প্রাইস কমালেই কখনো কার্যকরভাবে বিক্রি বাড়ানো যায় না। যেটা হয় সেটা শুধুমাত্র সাময়িক হয়। কখনোই টেকসই হয় না।

দাম না কমিয়ে কিভাবে বেশি সেলস করবেন।

বিক্রি বারবে শুধু এক ভাবে। যদি আপনি কাস্টমারের প্রবলেম সলভ করেন। অথবা আপনি কাস্টমারের Goal/ লক্ষ্য পুরুন করে দেন।

আমি আবারো বলছি কাস্টমারের প্রবলেম সলভ করে দেন এবং কাস্টমারের goal achieve করে দেন তাহলে বাড়বে আপনার বিক্রি।

এই পর্বে আমরা জানবো, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একজন কাস্টোমার এর একটি প্রোডাক্ট ও সার্ভিস ফাইনালি ক্রয় করার ক্ষেত্রে। আপনি কি জানেন, একজন ক্রেতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে বাজেট করে কোন কিছু কেনার পরিকল্পনা করে। সব সময় এর থেকে বেশি বাজেটের প্রোডাক্ট ও সার্ভিস নিয়ে থাকে।

অর্থাৎ ধরা যাক, আপনি নিজেই 10000 টাকার মধ্যে একটা স্মার্টফোন কিনবেন চিন্তা করছেন।

কিন্তু বাজারে গিয়ে আপনি দেখছেন এর থেকেও কিছু টাকা বাড়ালেই এর থেকে আরো ভালো ফিচারযুক্ত ভাল ফেসিলিটি যুক্ত আপনি হ্যান্ডসেট পাচ্ছেন। সেখানে দেখা যাবে আপনার 10 হাজার টাকা বাজেট হওয়া সত্ত্বেও আপনি 11000, 12000 বা 15000 টাকা দামের স্মার্টফোনটি আপনি কিনে ফেলেছেন। এবং এটা কিনার পর আপনি বাজেট ক্রস করার অস্বস্তি থেকে অনেক বড়, বেশি খুশি থাকবেন প্রোডাক্ট কিনতে পেরে।

কেন এমন হয় কখনো ভেবে দেখেছেন কি।

কেন আপনি 10% 20% বা 50 পার্সেন্ট পর্যন্ত বেশি টাকা দিয়ে আপনি আপনার মোবাইল ক্রয় করলেন। এর সহজ এবং ছোট উত্তর হচ্ছে এটা আপনার অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে।

যার জন্য আপনি বাড়তি টাকা টুকু খরচ করতে পেরেছেন। আপনার পছন্দের মূল্য বাড়তি টাকার থেকে অনেক বেশি। এখানে আপনার সপ্ন পুরন goal achieve হয়েছে এই প্রোডাক্টটি কিনতে পেরে।

শুরুতে যে মূল সমস্যাটি বলেছিলাম সেটা তে চলে আসছি, আপনাকে প্রোডাক্ট ও সার্ভিস এর দাম কমাতে হবে না বা কোন ডিসকাউন্ট দিতে হবেনা। প্রোডাক্ট বিক্রি করতে হবে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে কাস্টমারের প্রবলেম সলভ করতে হবে। আপনার প্রোডাক্ট ও সার্ভিস টি দিয়ে। বা কাস্টমারের লক্ষ্য অর্জন করতে হবে আপনার প্রোডাক্ট ও সার্ভিস টি দিয়ে।

অর্থাৎ কাস্টমার এই প্রোডাক্টটি কেনার পর তাঁর জীবনে কোন ধরনের সমস্যার সমাধান হবে সেটি আপনাকে সুন্দর ভাবে প্রেজেন্ট করতে হবে। বা বোঝাতে হবে।

আচ্ছা এখন কাস্টমার বলল যে তার কোন প্রবলেম নাই তাহলে তাহলে নিশ্চয়ই তার কোনো লক্ষ্য, goal, সপ্ন বা Dream আছে। আপনাকে আপনার প্রোডাক্ট এন্ড সার্ভিস দিয়ে তার লক্ষ্যটা পূরণ করতে হবে।

আপনি যদি আপনার প্রোডাক্ট এন্ড সার্ভিস এর ফিচারগুলো সুন্দর করে কাস্টমারকে বলেন তাহলে বিক্রি হবে না। আমি আবারো বলছি যত সুন্দর করে আপনি আপনার প্রোডাক্ট ও সার্ভিস এর খুঁটিনাটি বৈশিষ্ট্য খুব সুন্দর করে কাস্টমারকে বলেন না কেন বিক্রি না হওয়ার চান্স বেশি।

বিক্রি তখনই হবে যখন আপনি নির্দিষ্টভাবে বলতে পারবেন। আপনার প্রোডাক্ট ও সার্ভিস বেনিফিট।

আপনার কাস্টমারের লাইফের একটি নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করে দিবেন তখনই বিক্রি হয়ে যাবে।

বিক্রি হবে যখন আপনি নির্দিষ্টভাবে বলতে পারবেন আপনার কোম্পানির সার্ভিস কাস্টমার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণ করবে। অর্থাৎ আপনি হচ্ছেন একজন Gap Filler. আপনি কাস্টমারের সমস্যার সমাধান করছেন। বা আপনি কাস্টমারের কোন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য পূরণ করে দিচ্ছেন। তখন কাস্টমার আপনার প্রোডাক্ট ও সার্ভিস এর দাম যাই হোক না কেন তা কিনে ফেলবে। সেটা বাজেটে বাইরে হলেও দেখবেন সে কিনে ফেলছে।

চলুন এর একটি উদাহরণ দেয়া যাক,

আজকাল আমাদের দেশে মোটরবাইক অনেক জনপ্রিয়। মোটরবাইক কিনছেন রাইড শেয়ারিং এর ব্যবহার করার জন্য। কেউ বা কিনছেন নিজের দ্রুত চলাচল এর সুবিধার জন্য। আবার কেউবা কিনছেন সৌখিন যানবাহন হিসেবে।

একজনের উদ্দেশ্য কিন্তু রাইড শেয়ারের জন্য, দরকার সাশ্রয়ী মূল্যে একটি মোটর বাইক।

অর্থাৎ যে বাইকের মাইলেজ বেশি হবে তার জন্য সেটাই ভালো হবে। তো তার প্রবলেম হচ্ছে কম ফুয়েল খাই এর কম মোটরসাইকেল।

সেক্ষেত্রে আপনি যদি একজন মটরসাইকেল বিক্রেতা হোন

তাহলে এই ভদ্রলোককে বলতে হবে খরচ কত টাকা কম হবে সেই হিসাব। আপনাকে বুঝাতে হবে যে এই মোটর বাইক কিনলে তার প্রতি মাসে 4-5 হাজার টাকা সেভ হবে।

আবার দ্বিতীয় ব্যক্তি যে কিনা দ্রুত commute করার জন্য বাইক খুঁজছেন।

তাকে বুঝাতে হবে আপনার মোটরবাইকের এক্সিলারেশন রেট বা ইঞ্জিন পাওয়ার টা কত বেশি। কত দ্রুত সে commute করতে পারবে শহরের জ্যাম এর রাস্তা গুলো দিয়ে। এখানে আপনি তার একটি উদ্দেশ্য পূরণ করছেন। এবং একইসাথে তার সমস্যা জ্যামে বসে থাকা থেকে পরিত্রাণের উপায় বলে দিচ্ছেন।

তৃতীয় ব্যক্তি যিনি সৌখিন মোটরবাইক খুজছেন।

এটি হচ্ছে তার গোল। আপনাকে বুঝাতে হবে এই মোটরবাইক দেখতে Gorgeous Looks, সাউন্ড ওভারঅল অর্থাৎ যে মোটরবাইকটি চালালে তার ব্যক্তিত্ব বৃদ্ধি পাবে। আশেপাশের সবাই বলবে চমৎকার একটা বাইক কিনেছে।

তার এই উদ্দেশ্যটি পূরণ করার জন্য তাকে আপনাকে সাহায্য করতে হবে। তার এই উদ্দেশ্যকে পুরন করতেই আপনি তাকে সাহায্য করছেন।

তাকে ভিজুয়ালাইস করাতে হবে মোটরবাইক চালানোর সুন্দর আগামী মুহূর্তগুলো।

একজন সেলসম্যান হিসেবে আপনার কাজ হচ্ছে:

একজন কাস্টোমার এর সমস্যা সমাধান করা, কাস্টমারের সপ্ন পুরন কিংকা লক্ষ্য পুরনে সহায়তা করা।

1. কাস্টমার এর problem সম্পর্কে জানা। কাস্টমারের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য সম্পর্কে জানা।
2. কাস্টমার এর সমস্যা, উদ্দেশ্য কিংবা লক্ষ্য কে কীভাবে আপনার পন্য বা সার্ভিস দিয়ে পুরন করছে তা কাস্টমার কে বুঝাতে হবে। তাহলে দেখবেন বেশি খরচ করে হলেও আপনার পন্য বা সার্ভিস টি কিনে ফেলবে।

আর পন্যের প্রাইস নিয়ে আর কখনো চিন্তা করবেন না। এই চিন্তাটি আপনাকে আপনার এই সৃজনশীলতা, প্রবলেম সলভ ও goal achive এর চিন্তা থেকে আপনাকে অনেক দূরে সরিয়ে রাখবে।

বেশি বেশি বিক্রয় বাড়াতে কাস্টমারের উদ্দেশ্য, সমস্যা, সপ্ন ও লক্ষ্য এই বিষয় গুলো মাথায় রেখে কাজ করুন সফলতা পাবেন।

Tw3press

My name is Masudur Chowdhury I'm an Management and Engineering Consultant with more than 7 years of experience.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *